পরাবাস্তব কাহিনি নিয়ে লেখা দুই পর্বের গল্প ঃ তিন জন্মে (১)

একঃ
-আট–শ– বছর ধরে মা কারো অপেক্ষায় আছেন?!
মিতি অবাক কন্ঠে টেনে টেনে প্রশ্নটা করলো। ওর ছোটভাই আরিয়ান অবশ্য কিছু বলছেনা; সে বিস্ময়ে থ মেরে গিয়েছে।
-হ্যাঁ। আটশ বছর ধরে!
প্রমিতি তার আগের কথাটাই রিপিট করলো।

প্রমিতি অর্থাৎ প্রমিতি নিহিয়াল দেশের নামকরা বিজ্ঞানি। সে অক্সফোর্ড থেকে এস্ট্রোফিজিক্সে পিএইচ ডি করেছে। একজন মানুষের আটশ বছর মানেই সেখানে নিশ্চিতভাবে পুনর্জন্মের বিষয় আছে। প্রমিতির মতো একজন বিজ্ঞানীর মুখে কথাটা শুনে তাই বাকি দুই ভাইবোন খুব অবাক হয়েছে।

প্রমিতি তার মায়ের প্রথম সন্তান। একচল্লিশ ছুঁই ছুঁই। মায়ের উনিশ বছর বয়সে তার জন্ম হয়। মা মেয়ের বন্ধুত্ব খুব গভীর এবং বেশ খোলামেলা।

-আটশ বছরের অপেক্ষা আমার কাছেও বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য বিষয়। কিন্তু যে সত্যের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি তা মেনে না নিয়ে উপায় কী?
প্রমিতি মন্তব্য করল।

হঠাৎ পাশের কক্ষে একটা শব্দ হলো। তিনভাই বোনের ধারণা, তারামন ওখানে আড়ি পেতে আছে। আরিয়ান নিঃশব্দে ওখানে গিয়ে দেখলো, আসলেই তাই। কক্ষটা খালি করে সে বাইরে থেকে লক করে দিল।

প্রমিতি আবার আলোচনা শুরু করলো।
-আমরা কী কিছু করতে পারিনা?

প্রমিতির প্রশ্নে ছোট দুই জন এবার হতভম্ব হল। এই “কিছু করা” মানে যে নিছক কিছু করা না তা সবাই জানে।

-ঠিক আছে, তোরা সময় নিয়ে জবাব দে। প্রমিতি যোগ করলো।
-সোশ্যাল ডিসএপ্রোভালের বিষয় কী মাথায় রেখছো দিদিয়া?
মিতি মুখ খুললো।
আরিয়ান মাথা নেড়ে মিতিকে সমর্থন জানালো।

ছোট দুই ভাইবোন সোশ্যাল ডিসএপ্রোভালকে সবচে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। কিন্তু প্রমিতি জানে, তার ভাই বোনদের সাইকোলজিক্যাল ডিসএপ্রোভালই সবচে বড় সমস্যা! যা থেকে সে নিজে; এমনকি তার মাও মুক্ত নয়!

-আরো সময় নে। দরকার হলে দুজন আলাদা করে কথা বল। প্রমিতি পরামর্শ দিল।

দুইঃ
যে যেখানেই থাকুক না কেন বছরের মধ্যসময় অর্থাৎ প্রতিবছর জুন মাসের শুরুতে ভাই বোনেরা এই বাগান বাড়িতে আসে। তাদের স্ত্রী অথবা স্বামীদের কেউই সাধারণত সাথে থাকেনা। একান্তই ভাই বোনদের মিলন মেলা এটা। বরাবরের মত এবার ওদের মা সুতনুকা নিহিয়ালও সাথে আছেন। জয়দেবপুরে প্রায় দশ একর জায়গার ওপর নিজস্ব বাংলো বাড়ি এটা। ওদের নানা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। তিনি তাঁর শেষ জীবনে মেয়ের নামে এই বাংলোটা করে দিয়ে গেছেন।

ওরা আজ দুপুরেই বাংলোটাতে এসেছে। আরও দুদিন থাকবে। পাঁচ জুন সকাল সকাল চলে যাবে। শেষের দেড় দুইদিন খুব আনন্দ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু তার আগে জরুরি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা সেরে নিতে চায়। তাই এই ক্লোজড ডোর বৈঠক।

রাতের খাবার শেষে সুতনুকা নিহিয়াল সাধারণত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। আজ তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই সুযোগে তিন ভাইবোন আবার বৈঠকে বসেছে। প্রমিতির হাতে তিনটা ডায়েরি। প্রথমটা খুবই পুরান; জীর্ণ অবস্থায় আছে। কিন্তু যত্ন করে মোড়ানো।

এক ঢোক লেবুর শরবত খেয়ে প্রমিতি কথা শুরু করলো।
-উত্তর বঙ্গে প্রতাপশালী এক রাজা ছিলেন। বারোশ পাঁচ থেকে বারশো নয় শতাব্দীর কথা। হঠাৎ সেই রাজার অকাল মৃত্যু হলে রাণী রাজ্যের দায়িত্ব নেন। তখন তার বয়স একুশ মাত্র; এক শিশু কন্যার জননী । রাণীর সিংহাসনে আরোহের দুই বছরের মাথায় শিক্ষা বিভাগে নতুন এক অধ্যক্ষ যোগ দেন এবং একদিন তিনি রাণীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসেন। সেদিনকার সেই রাণীই আজ আমাদের মা; সুতনুকা নিহিয়াল। ওটা তাঁর প্রথম জন্ম ছিল। আর সেই অধ্যক্ষের জন্যই তিনি অপেক্ষা করছেন! আটশ বছর ধরে।

সবচে পুরান ডায়েরিটার পাতা খুলে প্রমিতি তার ভাই বোনদেরকে লেখাগুলি ভালো করে দেখতে বলে।
-তোমরা ডায়েরিতে হাতের লেখা দেখেছ?
-হ্যাঁ। ওটা মার হাতের লেখা। ছোট দুই ভাইবোন দ্বিধাহীন জবাব দেয়।
-পাতায় পাতায় সন তারিখ উল্লেখ আছে; দেখেছ?
-হ্যাঁ, তারিখগুলি বারোশ এগারো থেকে কয়েক বছরের।
-ডায়েরিতে লেখা কথাগুলি থেকে কিছু তোমাদের পড়ে শুনাব। তার আগে একটা কথা বলি। পিএইচডি করার সময় মার অনুমতি নিয়ে আমি একটা কাজ করেছি। ওখানে একটা বড় ল্যাবে ডায়েরিগুলি পরীক্ষা করে দুটো বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। একঃ মার বর্তমান হাতের লেখা এবং ডায়েরিগুলিতে লেখা একই ব্যাক্তির। দুইঃ ডায়েরিগুলিতে উল্লেখিত সন তারিখ সব নির্ভুল। কার্বন ডেটিং পরীক্ষায় লেখার এই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রমিতি প্রথম ডায়েরির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার সনদ সবাইকে দেখাল।

মিতি এবং আরিয়ান ভীষণ অবাক হলো। কয়েক মিনিট কারো মুখে কোন কথা এলোনা।

———–
একনলেজমেন্টঃ কবি সৌমিত্রের “তোমাকে সুতনুকা” কবিতা থেকে সুতনুকা নামটা নিয়েছি

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২০ টি মন্তব্য (লেখকের ১০টি) | ১০ জন মন্তব্যকারী

  1. নূর ইমাম শেখ বাবু : ০৪-০৪-২০১৯ | ১৮:৩৯ |

    বরাবরের মতই অন্যরকমের সুন্দর।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০৪-০৪-২০১৯ | ১৯:৩৪ |

    মিতি প্রমিতি আরিয়ান এবং ছোট দৃশ্যে তারামন। বাকিটা জুড়ে যিনি তিনি …
    সুতনুকা নিহিয়াল

    প্রথম খণ্ড ভূমিকা ধরে নিয়ে মাথার নিউরনে আটকে রাখলাম মি. মিড ডে ডেজারট।

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৫-০৪-২০১৯ | ০:১৭ |

      যথার্থ বলেছেন মিঃ মুরুব্বী। মন্তব্যে খুশি হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...
  3. সুমন আহমেদ : ০৪-০৪-২০১৯ | ১৯:৩৫ |

    ভালো বা মন্দের বিবেচনা করবো না। আগে পুরোটা পড়ে নেই। ধন্যবাদ আপনাকে। 

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৫-০৪-২০১৯ | ০:১৮ |

      মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  4. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ০৪-০৪-২০১৯ | ২০:২০ |

    শুভেচ্ছা প্রিয় ডেজারট ভাই। পরাবাস্তব আমার কাছে যদিও খুব ক্ষীণ তারপরও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা নিলাম শেষে কি আছে জানার জন্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৫-০৪-২০১৯ | ১:৩৪ |

      শুভেছা সুকবি সৌমিত্র চক্রবর্তী। পরাবাস্তব/পরজন্ম নিয়ে আমার  দ্বিধান্বিত অভিমত দ্বিতীয় পর্বে দেয়ার চেষ্টা করব।

      মন্তব্যে খুশি হয়েছি; অশেষ ধন্যবাদ! 

       

       

      GD Star Rating
      loading...
  5. শাকিলা তুবা : ০৪-০৪-২০১৯ | ২০:৪৮ |

    দুই পর্বের গল্পের প্রথম খণ্ড পড়লাম আজ। শিরোনাম থেকে বিষয়বস্তু রহস্যাবৃত। পড়বো।

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৫-০৪-২০১৯ | ০:১৮ |

      মন্তব্যে মুগ্ধ হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...
  6. রিয়া রিয়া : ০৪-০৪-২০১৯ | ২১:৩০ |

    আট–শ– বছর ধরে মা কারো অপেক্ষায় আছেন। বিষ্ময়কর !! পুনর্জন্ম কিনা জানতে হবে। অপেক্ষা ….

    GD Star Rating
    loading...
  7. রুকশানা হক : ০৪-০৪-২০১৯ | ২৩:৪৫ |

    প্রমিতি নিহিয়ালের ভাবনা জুড়ে যে বিষয়টি কাজ করছে তার হয়তো কোন বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। আমাদের গত হওয়া আত্মাগুলোর পূণঃসংস্করণ হয়তো পরজন্ম। যদি তাই হয়ে থাকে তবে আমরা ও হয়তো  অন্য কোন আত্মার প্রতিচ্ছায়া ।

    পরাবাস্তব এ দুর্দান্ত কাহিনী  পাঠকের মনে দাগ কাটবে সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। 

    দেখি কাহিনী কোন দিকে মোড় নেয়। অপেক্ষায় রইলাম  ।     

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৫-০৪-২০১৯ | ০:২৩ |

      বলা যায়না; কত রহস্য রয়েছে সবকিছু ঘিরে!

      Smile  Smile  Smile  

      GD Star Rating
      loading...
  8. নিতাই বাবু : ০৫-০৪-২০১৯ | ৪:১৬ |

    সত্যি ভালো লাগা এক গল্প। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। আশা করি ভালো থাকবেন। 

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৬-০৪-২০১৯ | ১২:২০ |

      মন্তব্যে খুব খুশি হয়েছি।

      অশেষ ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...
  9. সুজন হোসাইন : ০৫-০৪-২০১৯ | ৯:৫১ |

    গল্পের বাঁকে বাঁকে হারিয়ে গিয়েছিলাম,    অনেক ভালো লাগলো,,,শুভেচ্ছা জানবেনhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif  

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৬-০৪-২০১৯ | ১২:২২ |

      মন্তব্যটা কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়ে খুব আনন্দিত  হলাম।

      অশেষ ধন্যবাদ!

      GD Star Rating
      loading...
  10. হাসনাহেনা রানু : ০৫-০৪-২০১৯ | ১৬:২৪ |

     গল্প তিন জম্মে (১) পড়লাম। সুন্দর উপস্থাপন কবি ভাইয়া। বাকী অংশের অপেক্ষা….

    শুভ কামনা।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মিড ডে ডেজারট : ০৬-০৪-২০১৯ | ১২:২৪ |

      বাকী অংশ লেখা দেরিতে শুরু করেছি; কাল পোস্ট করতে পারিনি। 

      মন্তব্যে খুব খুশি হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ!

       

      GD Star Rating
      loading...